পা দিয়ে লিখে এইচএসসি পাস করলেন ফজলু


FahaduL প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ১৩, ২০২৩, ১:৪২ অপরাহ্ন /
পা দিয়ে লিখে এইচএসসি পাস করলেন ফজলু

জন্মগতভাবে দুই হাত ও একটি পা নেই ফজলুর রহমানের। তবে দমে যাননি। এক পায়ের আঙুল দিয়ে লিখে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। শারীরিক প্রতিবন্ধী ফজলুর রহমান সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়নের চরগোপালপুর গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে।

বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে মিটুয়ানী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। ওই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৫৬ পেয়ে পাস করেন ফজলু। বেলকুচির দৌলতপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় ২.৭৫ পেয়ে পাস করেন। তার বোন আসমাও এবার এইচএসসিতে জিপিএ ৩.৩৩ পেয়ে পাস করেছেন। এই ফলাফলে খুশি তার পরিবার।

এ বিষয়ে ফজলুর রহমান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, অনেক কষ্টে এক পা দিয়ে লাফিয়ে স্কুলে গিয়েছি। বই-খাতা-কলম ছোট বোন আসমা নিয়ে যেত। সে না গেলে আমার স্কুলে যাওয়া হতো না। এই রেজাল্ট করতে পেরে আমি খুশি। তবে অভাব আমাকে সবসময়ই তাড়িয়ে বেড়ায়। একটি চাকরি আমার জীবনের পরিবর্তন করে দিতে পারে। সবার সহযোগিতায় আমি আরও এগিয়ে যেতে চাই।

ফজলুর বাবা সাহেব আলী বলেন, দিনমজুরি করে কোনোরকম সংসার চালাই। এর মধ্যে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগাবো কীভাবে। টাকার অভাবে কোনোদিন প্রাইভেট পড়াতে পারিনি, বইও কিনে দিতে পারিনি। ফজলুর নামে একটি প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড আছে। তা দিয়েই ওর লেখাপড়ার খরচ চলে। ৯ সদস্যের সংসার আমার একার উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল।

তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরে ৭৬ হাজার টাকা সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন মামুন বিশ্বাস নামে একজন। সেই টাকা দিয়েই পড়াশোনা করছে আমার ছেলে। এই টাকাটা না হলে হয়তো সে পড়তেই পারতো না।

ফজলুর মা সারা খাতুন বলেন, ২০০০ সালে ফজলু বিকলাঙ্গ অবস্থায় জন্ম নেয়। ছোট মেয়ে আসমা ফজলুকে লেখাপড়ায় সাহায্য করে। কিছু কিছু কাজ নিজেই করতে পারে। কিছু কাজে তাকে সাহায্য করতে হয়। দৌলতপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মাসুদ রানা বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ফজলু লেখাপড়ায় ভালো, স্মরণ শক্তি প্রখর। তার ফলাফলে আমরা খুশি।

এ বিষয়ে সমাজকর্মী মামুন বিশ্বাস বলেন, ফজলুর রহমানের পড়াশোনার প্রবল আগ্রহ দেখে এসএসসিতে ফেসবুকের মাধ্যমে ৭৬ হাজার টাকা অনুদান তুলে দিয়েছি। এ টাকা দিয়েই তার এতদিন লেখাপড়া চলেছে। তার পড়াশোনার ইচ্ছা রয়েছে। সাহায্য সহযোগিতা পেলে সে ভালো কিছু করতে পারবে।