প্রথম বিসিএস পরীক্ষায় বাজিমাত পুলিশ ক্যাডারে অষ্টম হলেন ঢাবির রাকিবুর


FahaduL প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০২৩, ৫:৫০ পূর্বাহ্ন /
প্রথম বিসিএস পরীক্ষায় বাজিমাত পুলিশ ক্যাডারে অষ্টম হলেন ঢাবির রাকিবুর

মো. রাকিবুর রহমান ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় পুলিশ ক্যাডারে মেধা তালিকায় অষ্টম স্থান অধিকার করেছেন। এটি তার প্রথম বিসিএস। প্রথম বিসিএস পরীক্ষায় সফলতা দেখিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এই শিক্ষার্থী। সম্প্রতি বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন, পরামর্শ ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন দৈনিক সকালের সময়কে।

দৈনিক সকালের সময় : আপনার ছোটবেলা কেমন কেটেছে?

রাকিবুর রহমান : আমার ছোটবেলা কেটেছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায়। আমার স্কুল ছিল হালইসার নন্দনসার উচ্চ বিদ্যালয়। আমি ছোটবেলা থেকেই খুব ভালো ছাত্র ছিলাম। আমি এই স্কুলের প্রথম কোনো ছাত্র, এসএসসি পরীক্ষায় আমি এবং আমার দুই বন্ধু সর্বপ্রথম এই স্কুল থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করি। আমার কলেজ ছিল সুরেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়। আমি কলেজ জীবনেও প্রথম ছিলাম।

দৈনিক সকালের সময় : বিসিএস পরীক্ষায় আপনার প্রথম পছন্দ কি পুলিশ ছিল?

রাকিবুর রহমান : জি, ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় আমার প্রথম পছন্দের ক্যাডার ছিল পুলিশ। এটিই আমার প্রথম বিসিএস পরীক্ষা।

রাকিবুর রহমান । আমার বাবার স্বপ্ন ছিল আমি আইনজীবী হই। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আমার পুলিশ হওয়ার প্রতি আগ্রহ ছিল। সমাজের বিশেষ কিছু অসঙ্গতি আমার মনে গভীরভাবে নাড়া দিত, সেখান থেকেই পুলিশ হওয়ার ইচ্ছা জাগে।

দৈনিক সকালের সময় : বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পর্কে যদি বলতেন?

রাকিবুর রহমান : বিসিএস পরীক্ষা হলো দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, পরীক্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রচুর ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাসের প্রয়োজন হয়। আমি ছোটবেলা থেকেই গুছিয়ে পড়তে ভালোবাসতাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের তৃতীয় বর্ষ থেকেই আমি বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করি। আমি মানসিক প্রশান্তির জন্য বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাস থেকে যে কোনো একটি বই আগে পুরোটা শেষ করতাম, তারপর আরেকটি বিষয় পড়তাম। এভাবে একটি বিষয়ের পর আরেকটি বিষয় গুছিয়ে পড়তাম। প্রিলি আমার খুব একটা ভালো হয়নি, তবে লিখিত পরীক্ষার জন্য নিয়মিতভাবে পড়াশোনা করতাম এবং লিখিত পরীক্ষা খুব ভালো দিয়েছিলাম। লিখিত পরীক্ষা দেয়ার পর আত্মবিশ্বাস আরো বেড়ে গিয়েছিল।
দৈনিক সকালের সময় – বিসিএস পরীক্ষার জন্য আপনি কি নিয়মিত রুটিন অনুযায়ী পড়তেন?

রাকিবুর রহমান – আসলে রুটিন বলতে আমি নিয়মিত গুছিয়ে পড়তাম, ওই রকম কোনো ধরাবাঁধা রুটিন মেনে চলতাম না।

রাকিবুর রহমান : আমার আইডল আমার বাবা মোঃ নুরুল ইসলাম দেওয়ান। আমরা তিনভাই তিনবোন, ভাইদের মধ্যে আমি সবার ছোট। আমার পুলিশ ক্যাডার হওয়ার পিছনে আমার দুইভাই বড় ভাই নাছির উদ্দীন রাজু দেওয়ান এবং মেজো ভাই রাজিব দেওয়ান ভূমিকা অনেক বেশী। আমার বড় ভাই অনুপ্রেরণায় এবং মেজো ভাইয়ের সহযোগিতায় আমি আজ এতদূর। আমার এলাকার মানুষের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ। তারা সবসময় আমার জন্য দোয়া করতো।

দৈনিক সকালের সময় : আপনার পড়াশোনার ক্ষেত্রে কোনো ধরণের প্রতিবন্ধকতা ছিলো কি?

রাকিবুর রহমান : আমার বাবা ছোট বেলা থেকেই সবসময় আমার উপর আলাদা নজর রাখতো, পড়াশোনার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা আমার জীবনে আসেনি। বিসিএস পরীক্ষার আগে আমি বাংলাদেশ পুলিশের উপ -পরিদর্শক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলো, তবে জয়েন্ট করা হইনি। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে একটু হতাশায় ছিলাম। তবে আমার বন্ধু বান্ধব, পরিবারের সদস্য সকলের অকৃত্রিম ভালবাসা এবং সহযোগিতায় আমি এই হতাশার কঠিন পরিস্হিতি মোকাবেলা করেছি।

দৈনিক সকালের সময় : আপনার বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডির্পাটমেন্ট নিয়ে যদি কিছু বলতেন?

রাকিবুর রহমান : আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-১৫ সেশনে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হই। আমার অনার্সের রেজাল্ট ছিলো ৩.৪৭ এবং মাস্টার্সের রেজাল্ট ছিলো ৩.৩৮। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত। আমি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে পড়েছি, এই বিভাগের আমার সকল শিক্ষক শিক্ষিকার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হলে থাকতাম, আমি আমার জীবনের সেরা সময়গুলো এই হলে কাটিয়েছি, জীবনের স্মৃতিতে সোনালী অতীত হয়ে থাকবে সেইসব স্মৃতি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হল, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার জীবনের স্বপ্ন পূরণের সহায়ক ছিলো।

দৈনিক সকালের সময় : আপনি কেমন পুলিশ অফিসার হতে চান?

রাকিবুর রহমান : আমি একজন মানবিক পুলিশ অফিসার হতে চাই, আমাদের সমাজের অনেক অসঙ্গতি এখনো চোখে পড়ে, আমি সমাজের অসঙ্গতিগুলোকে দূর করার জন্য মানবিক নীতি ও আর্দশপূর্ণ একজন ভালো পুলিশ অফিসার হতে চাই। জনগণের সাথে কাজ করতে চাই, জনবান্ধব আর্দশবান পুলিশ অফিসার হতে চাই।

দৈনিক সকালের খবর : দৈনিক সকালের সময়কে মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।

রাকিবুর রহমান : আপনাকেও ধন্যবাদ।