৪০তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন জান্নাতুল ফেরদৌস। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রথম পছন্দ প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু প্রথম হবো, এতটা আশা করিনি। বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়াই এখন তার প্রধান দায়িত্ব বলে জানান তিনি।
প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম হওয়া জান্নাতুল বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে এমবিএ করছেন। কুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ২০১২-১৩ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।
প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম হওয়া ও বিসিএস প্রস্তুতি নিয়ে তিনি বলেন, বিসিএসের প্রচলিত প্রস্তুতি বলতে যেটা বোঝায়, সেভাবে আমি প্রস্তুতি নেইনি। খুব বেশি গাইড বই পড়া হয়নি। বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে বিগত বছরগুলোর প্রশ্ন ও সিলেবাস পর্যালোচনা করে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ যেমন বাংলাদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, সংবিধান, ভৌগলিক অবস্থান, সমসাময়িক বিষয়, অর্থনৈতিক সমীক্ষা, দৈনন্দিন বিজ্ঞান, সাধারণ গণিত, বাংলা ও ইংরেজি ব্যকরণ ও বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্য সম্পর্কে ধারণা নিয়েছি। লিখিত পরীক্ষার আগে একটু লম্বা সময় পেলেও গুছিয়ে প্রস্তুতি নিতে পারিনি। পরবর্তীতে পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশের পর সময় পেয়েছিলাম প্রায় বিশ দিন। এই বিশ দিনে রুটিন মাফিক সব বিষয়ে গুছিয়ে পড়াশোনা করেছি।
৪০তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা করোনা পরিস্থিতির জন্য বারবার বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে মৌখিক পরীক্ষার সময় নিয়ে একটু অনিশ্চয়তায় ছিলাম। এর মাঝে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে এমবিএ প্রোগ্রামে ভর্তি হই। যে কারণে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ধারাবাহিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারিনি। তবে মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশের পর এক মাস সময়ে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মতো প্রস্তুতি গ্রহণ করি।
পরিবার থেকে বিসিএস পরীক্ষার জন্য সহায়তার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার পরিবার পরীক্ষার বিষয়ে পূর্ণ সহায়তা করেছে। তারা সবসময় আমাকে উৎসাহ দিয়েছে। যখন আমার মধ্যে পরীক্ষা ভীতি কাজ করেছে, তারা আমাকে মানসিকভাবে শক্তি যুগিয়েছে। এ বিষয়ে কোনও পক্ষ থেকে বাধা বা চাপ ছিল না বলে জানান তিনি। বরং বিসিএস পরীক্ষার বিষয়ে সবার থেকে পূর্ণ সমর্থন ও সাহায্য পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
জান্নাতুল বলেন, স্বামীর পরিবার আমাকে সবসময় বিসিএস পরীক্ষার বিষয়ে সহায়তা করেছে। আমার স্বামী নিজেও প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য। তিনি সবসময় আমাকে পরীক্ষায় ভালো করতে উৎসাহ ও নানা নির্দেশনা দিয়েছেন। আমি যখন নিজের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলতাম, আমার স্বামী প্রেরণা যুগিয়ে নতুন করে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন।
বিসিএস পরীক্ষা অংশগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৪০তম বিসিএস-ই আমার প্রথম পরীক্ষা। প্রথম পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার আনন্দ ও প্রাপ্তিটা অনেক বেশি।
পরীক্ষা চলাকালে নিজের মানসিক অবস্থা ও হলের পরিবেশ বিষয়ে জান্নাতুল বলেন, যেহেতু এটা আমার প্রথম বিসিএস পরীক্ষা ছিল, স্বভাবতই আমি প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে খুব নার্ভাস ছিলাম। যদিও আমার মা-বাবা ও স্বামী সবসময় আমার পাশে থেকেছেন। লিখিত পরীক্ষার সময় আমার স্বামী শিক্ষা ছুটিতে যুক্তরাজ্যে ছিলেন, তখন আমার মা-বাবা আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। মৌখিক পরীক্ষার আগের রাতে দুশ্চিন্তায় ঘুম হয়নি। তবুও আল্লাহর রহমতে মৌখিক পরীক্ষা ভালো হয়েছিল। পরীক্ষার হলের পরিবেশও ভালো ছিল। আমি সবসময় নিজেকে শারীরিকভাবে ফিট রাখার চেষ্টা করেছি, যেন অসুস্থতার কারণে আমার পরীক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
ফলাফল জানার পর অনুভূতির বিষয়ে তিনি বলেন, আমার আশা ছিল, ভাগ্য সহায় থাকলে আমার প্রথম পছন্দ প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হবো। তবে প্রথম হবো, এ আশা করিনি। বিসিএসের ফলাফল যখন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়, তখন আমি অন্য একটা চাকরির মৌখিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সে সময় আমার স্বামী ফোন করে বলেন যে, আমি প্রথম হয়েছি। প্রথমে বিশ্বাস হয়নি, পরে আস্তে আস্তে ধাতস্থ হয়েছি। এখনও সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগে। স্বপ্নকে ছোঁয়ার অনুভূতি মনে হয় এমনই।
নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিষয়ে প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম হওয়া জান্নাতুল বলেন, সরকার আমাকে যে দায়িত্বের জন্য নির্বাচিত করেছে তার জন্য নিজের শতভাগ ঢেলে দেওয়াই আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। উন্নত বাংলাদেশ গড়ার যে লক্ষ্য সরকার হাতে নিয়েছে তা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়াই আমার প্রধান দায়িত্ব।
তিনি আরও বলেন, দেশের সেবায় কাজ করার অনুপ্রেরণা থেকেই মূলত আমি বিসিএস পরীক্ষায় অবতীর্ণ হই। পরবর্তীতে আমার স্বামী ও পরিবারের সবার উৎসাহেই পথচলা। আমার সাফল্যে বাবা-মা, স্বামী, পরিবারের সব সদস্য, শিক্ষক ও বন্ধুবান্ধবরা বেশ উৎফুল্ল।
জান্নাতুল বর্তমানে নীলক্ষেতের বিসিএস প্রশাসন অ্যাকাডেমি ম্যাজিস্ট্রেট কোয়ার্টারে বসবাস করছেন। তিনি যশোরের অভয়নগর উপজেলার কোদলার বাসিন্দা। তার স্বামীর বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়ায়।
তার বাবা বিএম সবুর উদ্দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত উপমহাব্যবস্থাপক। মা শামসুন নাহার গৃহিনী। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে জান্নাতুল দ্বিতীয়। বড় বোন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক এবং বর্তমানে শিক্ষা ছুটিতে কানাডায় অবস্থান করছেন। ছোট দুই ভাইবোন দ্বাদশ ও দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।
স্বামী শরীফ আসিফ রহমান বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৩৪তম ব্যাচের সদস্য এবং সিনিয়র সহকারী সচিব। শ্বশুর বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ মনিরুজ্জামান অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা ও শাশুড়ি নাসরিন মনির গৃহিনী। জান্নাতুলের দেবর একজন স্থপতি।
আপনার মতামত লিখুন :